ঢাকা , বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫ , ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
‘অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে’তে যোগ দিচ্ছেন আনা কেলসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে যা বললেন টেলর সুইফট এবার হত্যার হুমকি পেলেন কমল হাসান বিচ্ছেদের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলো ঐশ্বরিয়া-অভিষেক জুটি এবার ওটিটিতে মুক্তি পাচ্ছে ‘সাইয়ারা’ মার্শাল আর্ট ভিত্তিক সিনেমা নিয়ে আসছেন রুবেল স্ত্রী ও তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন হিরো আলম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সুনেরাহ এনসিপি নেতার চাঁদাবাজি দেখো আরও পাঁচ লাখ নিতে পারো কি না উত্তরা-তুরাগে হানিট্র্যাপ আতঙ্ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অর্থসংকটে ব্যাহত হৃদরোগের চিকিৎসা ১২০ বারের মতো পেছালো সাগর রুনির তদন্ত প্রতিবেদন ২৬২ যাত্রীসহ রোমে আটকা বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইট বিমান এয়ারলাইন্সে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি, বাড়ছে শঙ্কা জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে ৬০ ছাত্রনেতার বিবৃতি ভোট কাকে দেবেন সিদ্ধান্ত নেননি ৪৮ শতাংশ মানুষ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীদের প্রতীকী অনশনে পুলিশের বাধা পরিবহন মালিকদের চাপে নতি স্বীকার সরকারের হাসিনা, জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু প্রাইভেটকারে দুই লাশ : সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যা বলছে পুলিশ

বিমান এয়ারলাইন্সে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি, বাড়ছে শঙ্কা

  • আপলোড সময় : ১২-০৮-২০২৫ ০৬:৫২:৩৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১২-০৮-২০২৫ ০৬:৫২:৩৮ অপরাহ্ন
বিমান এয়ারলাইন্সে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি, বাড়ছে শঙ্কা
* আকাশে ওড়ার পর বিমানে ধরা পড়ছে নানা ধরনের ত্রুটি
* নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না যাত্রীরা
* ফ্লাইট পরিচালনায় দায়িত্বশীলদের গাফিলতির অভিযোগ


বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা উড়োজাহাজে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ার ঘটনায় নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে, নাকি এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগের দুর্বলতাই এর জন্য দায়ী? উড়োজাহাজ নষ্ট বা কোনও ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে নেওয়া হয় হ্যাঙ্গারে। সেখানে মেরামত শেষে ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মেরামত শেষে আকাশে ওড়ার পর বিমানে ধরা পড়ছে নানা ধরনের ত্রুটি। গন্তব্যে না গিয়ে ফেরত আসছে, এতে প্রভাব পড়ছে ফ্লাইট শিডিউলে। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না যাত্রীরা। দেশি-বিদেশি বিমানবন্দরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। এসব কারণে বিমানে নিয়মিত ভ্রমণকারীরা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে অন্য এয়ারলাইন্স বেছে নিচ্ছেন। ফলে যাত্রী হারানোর পাশাপাশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পরিচালনায় দায়িত্বশীলদের অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির অভিযোগ বারবার সামনে আসছে। এতে লাভের বদলে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।
জানা গেছে, গত এক মাসে আকাশে ওড়ার পর বিমানের অন্তত ১৬টি উড়োজাহাজে ত্রুটি ধরা পড়েছে। রহস্য উদঘাটনে কর্তৃপক্ষ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সমাধান হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, হ্যাঙ্গারে কর্মরত প্রকৌশলীরা দায়সারা কাজ করছেন। গত বৃহস্পতিবার (৭আগস্ট) পয়োবর্জ্য ব্যবস্থা (ল্যাভেটরি ফ্লাশিং সিস্টেম) অকেজো থাকায় ঢাকা থেকে আবুধাবিগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি ৩২৭ এক ঘণ্টা উড়ে মাঝ আকাশ থেকে ফিরে আসে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার জানায়, উড্ডয়নের সময়ই বিমানের সব পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা অচল ছিল। মেলবোর্ন (এমইএল) প্রক্রিয়া অনুসারে উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়া হলেও দীর্ঘ আন্তর্জাতিক রুটে এ অবস্থায় যাত্রা সম্ভব নয় বলে পাইলট ও ক্রুরা আবার ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক আল মাসুদ খান জানান, ফেরত আসা উড়োজাহাজটির ত্রুটি সারানো হয়েছে। ফ্লাইটের যাত্রীদের অন্য উড়োজাহাজে আবুধাবি পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, একের পর এক বিমান ত্রুটি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ প্রকৌশল বিভাগকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। কারও বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, গত বুধবার (৬ আগস্ট) আকাশে বিমানের এক ফ্লাইটে ত্রুটি ধরা পড়ে। দুপুর ১২টা ৬ মিনিটে ফ্লাইটটি ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়। মিয়ানমারের আকাশে প্রবেশের পর উড়োজাহাজটির এক ইঞ্জিনে অস্বাভাবিক কম্পনের সংকেত পান পাইলট। নিরাপত্তা বিবেচনায় দুপুর ১টা ২১ মিনিটে উড়োজাহাজটি ফেরত এসে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এতে ১৬টি ফ্লাইটের শিডিউল এলোমেলো হয়ে পড়ে। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। যাদের মধ্যে ছিলেন বয়স্ক, অসুস্থ, শিশু ও আন্তর্জাতিক গন্তব্যের যাত্রী। অ্যাভিয়েশন বিশ্লেষকদের মতে, এসব ঘটনার মূলে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের অবহেলা এবং দায়সারা দায়িত্ব পালন। অভিযোগ রয়েছে, এ বিভাগের অনেক কর্মকর্তা প্রকৃত কারিগরি জ্ঞান ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নিয়মিত প্রশিক্ষণের আওতায় না আনা এবং অভ্যন্তরীণ তদারকির ঘাটতিও বড় কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে গত ২৮ জুলাই দাম্মামগামী বিমানের বিজি-৩৪৯ ফ্লাইটটিও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঢাকায় ফিরে এসেছিল। আর গত ১৬ জুলাই রাতে দুবাই বিমানবন্দরে বিমানের একটি বোয়িং উড়োজাহাজের চাকা ফেটে গিয়ে ফ্লাইট বিঘ্নিত হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন ফ্লাইটের ২২০ যাত্রী। এর কয়েক দিন পর ঢাকা থেকে উড়ে গিয়ে জেদ্দায় অবতরণের পর পার্কিং করতে গিয়ে বিমানের একটি বোয়িংয়ের ৭ নম্বর চাকায় ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে উড়োজাহাজটিকে সেখানেই গ্রাউন্ডেড করা হয়। এতে বিপাকে পড়েন ফ্লাইটটির ৩৮২ যাত্রী। গত বুধবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়া বোয়িংয়ের উড়োজাহাজটি প্রায় আট মাস ধরে হ্যাঙ্গারে রেখে মেরামত করা হয়। শেষে আকাশে ওড়ানোর পরই দেখা দেয় ত্রুটি। অথচ মেরামতের পর যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা ছাড়াই সেটিকে প্রস্তুত ঘোষণা করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো কোনও আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার ফল। উড়োজাহাজগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করায় ছোট ছোট সমস্যা বড় ধরনের বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেকোনও উড়োজাহাজ ওড়ানোর আগে পূর্ণাঙ্গ কারিগরি পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্ভোগের শিকার শাকির আহমেদ নামে এক বিমানযাত্রী জানান, তার ফ্লাইট ছিল বিকাল ৫টায়। একপর্যায়ে জানানো হয়, যান্ত্রিক সমস্যার কারণে দেরি হবে। এরপর রাত ৯টা পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট আপডেট দিচ্ছিল না কর্তৃপক্ষ। বাচ্চাদের নিয়ে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষায় তার খুব কষ্ট হয়েছে।
বিমানের নিয়মিত ভ্রমণকারী একাধিক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির মতো গুরুতর বিষয়কে হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে। উড়োজাহাজ আকাশে উড়বে, সেটি ঠিকঠাক কিনা, আগে নিশ্চিত হতে হবে। এখানে মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ। ব্যাংককগামী বিজি৩৮৮ ফ্লাইটটি যান্ত্রিক ত্রুটি ও ডাইভার্সনের কারণে ৬ ঘণ্টা ৩১ মিনিট বিলম্ব হয়। আবার দোহাগামী বিজি১২৫ ফ্লাইট ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট পিছিয়ে যায়। ফ্লাইট বিলম্বের মধ্যে একটি অংশ ছিল ইঞ্জিন প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হওয়া, আরেকটি অংশ ছিল ট্রাফিক সমস্যা। এছাড়া মদিনাগামী বিজি২৩৭ ফ্লাইট ৩৫ মিনিট, জেদ্দাগামী বিজি১৩৫ ফ্লাইট ১৫ মিনিট, শারজাগামী বিজি১৫১ ফ্লাইট ৫ মিনিট, বিজি-৬১৫ (চট্টগ্রাম) ফ্লাইট ৪৫ মিনিট, বিজি৬০৩ (সিলেট) ৪২ মিনিট এবং বিজি৪৯৩ (সৈয়দপুর) ফ্লাইট ৪০ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে যায়। এ নিয়ে বেশির ভাগ যাত্রীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় সাবেক এক বৈমানিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিমান ওড়ানো অত্যন্ত জটিল ও সংবেদনশীল একটি প্রক্রিয়া। এখানে সামান্য গাফিলতিই প্রাণহানির কারণ হতে পারে। একের পর এক ঘটনায় এখন সময় এসেছে বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসহ পুরো ব্যবস্থাপনাকে পুনর্গঠন করার। পাশাপাশি এটি বিমানের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, যোগ্য প্রকৌশলী নিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সর্বোপরি, জবাবদিহিমূলক পরিবেশই হতে পারে নিরাপদ আকাশপথের প্রথম পদক্ষেপ।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশ বিমানসহ সবকটি উড়োজাহাজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আকাশ থেকে কেন ফ্লাইট ফেরত আসছে, সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স